... অবশেষে আলেকজান্ডার কহিলা বিষাদে ...


ইতিহাসের সন-তারিখ মনে থাকেনা, রাখার প্রচেষ্টার সুস্পষ্ট অভাব চিরকাল আছে আমার মধ্যে। তবে ঘটনাগুলো প্রায়শই মনে থেকে যায় গল্পের মত করে।
সেইসব গল্প হাতড়েও কোথাও যখন পেলাম না- আলেকজান্ডারের বিজয়রথ আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশে এসেই পিছন ফিরেছিলো- মুভিতে সেটা দেখে তাই খানিকটা পুলকিত হলাম।
এই সিনেমাটিকেই সর্বং সত্য বলে ভাবার কোন কারন নেই, ভাবছিও না, কিন্তু সত্যের কাছাকাছি কোন জায়গার বলে ভাবতে ভালো লাগছিলো শুরু থেকেই।
মহাবীর জাতীয় মানুষদের নিয়ে ছোটবেলা থেকে শুনে আসা কল্পকথাগুলো শেষমেষ তাদের মানুষের সীমানা থেকে খানিকটা উপরে তুলে ছেড়ে দেয়। আমাদের ছা-পোষা দূর্বল মানব-মনের মাধ্যাকর্ষন শক্তির ধরাছেঁায়ার বাইরেই থেকে যান তাঁরা। সা¤প্রতিক কুড়িয়ে পাওয়া প্রগতিশীলতার ব্যাজ বুকে আটকে সিনেমায় বাস্তবতার ছোঁয়া খুঁজে বেড়ালেও - আমরা আসলে সেই মহাবীরদের মধ্যে এখনো মানুষ নয়, কোন একজন সুপারম্যানকেই দেখতে চাই।

মনের সেই চাওয়ার সাথে সঙ্গতি রেখে বালক আলেকজান্ডার যখন কারো পোষ না মানা ঘোড়ার পিঠে চেপে দাপিয়ে বেড়ালেন, অথবা শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের কাছে ব্যক্ত করলেন পৃথিবী জয়ের বাসনা- অবাক হইনি। তবে হোঁচট খেয়েছি- অবশ্যই- যুবক আলেজান্ডারের দৃষ্টি অনুসরণ করে। মেসাডোনিয়া কিংবা ব্যাবিলনের লাস্যময়ীদের ছেড়ে তিনি যখন প্রায়শই চোখে-কাজল-পরা কিছু অর্ধযুবকের দিকে চোখ ফেরান- অনভ্যস্ত মন খানিকটা থমকে গিয়েছিলো বটে। সেটা বিশাল একটা ধাককায় পরিণত হয়- আলোআঁধারীর কোন এক রাতে সবচে' গভীর কাজল চোখের ছেলেটিকে নিয়ে যখন নগ্ন আলেকজান্ডার তার বিছানায় গেলেন।

-------------------------------------------------------------------------------
বিজ্ঞাপন বিরতি:
সৌজন্যে- ইশতিয়াক জিকো

-------------------------------------------------------------------------------

বীরসুলভ গাম্ভির্য দেখানো হয় নি খুব একটা। আবেগে কম্পমান, কখনো ক্রন্দনরত- অথবা, সাত বছর ধরে যুদ্ধরত বাড়িছাড়া সহযোদ্ধাদের উদ্দীপ্ত করতে মানবিক অনুভূতিগুলোর সহায়তা নিতে দেখে অবাক হলেও, অনেকটাই পরিচিত মানুষ করে তোলা হয়েছে।

ব্রেভ হার্ট অথবা প্যাট্রিয়টের মত যুদ্ধকালীন সৌন্দর্য খুব একটা নেই এখানে। ভারতীয় বৃষ্টি অথবা হাতির দাপটে তাঁর রাশ টেনে ধরাটাও অনেকটা যৌক্তিক মনে হয়েছে।
সেখানে, তীরের আঘাতে লুটিয়ে পড়া আলেকজান্ডারকে সঙ্গীরা বাঁচিয়ে তোলেন। সেটারই প্রতিদানে হয়ত- সেরে উঠে- অবসাদগ্রস্থ আলেকজান্ডার বিষাদমাখা গলায় ঘোষনা দেন, মেসাডোনিয়ার যোদ্ধারা, উই উইল গো ব্যাক হোম।

আকাশে উড়তে থাকা বাজপাখির চোখ দিয়ে যুদ্ধের ময়দান দেখানোর আইডিয়াটা দারুন। আলেকজান্ডার-বঁধূ রুকসানার নাচ ও। ঘটমান বর্তমানের সাথে প্যারালালি ফ্ল্যাশব্যাকে প্রাসঙ্গিক অতীত দেখানোটা মাঝে মাঝেই বিরক্তিকর ঠেকেছে।
আর, অ্যানজেলীনা জোলিকে মানিয়ে গেছে সুন্দর-ক্রুদ্ধ- আলেকজান্ডার মাতার ভূমিকায়।

একের পর এক দেশজয়ের পথে মাইলের পর মাইল বরফ ঢাকা পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে - শীতে কাঁপতে থাকা আলেকজান্ডারকে মনে পড়বে আরো কটা দিন। তবুও হয়তো আরেকবার দেখবার ইচ্ছা খুব একটা প্রবল হবে না- একেবারেই আলেকজান্ডারসুলভ নাহয়েউঠতেপারা এই সিনেমাটিকে।

Popular posts from this blog

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান

আরেকটিবার-