... আমরা যারা বাংলা বই পড়তে চাই...


পড়তে শেখার পর থেকেই পড়ি।
তারো আগে পড়তে জানতাম না। কি জানি, নইলে হয়তো তখন থেকেই পড়তাম। :-)
অল্প-বিস্তর বানান করতে শেখার পর থেকেই যন্ত্রনা শুরু করে দিয়েছিলাম। বাবার সাথে বের হলে রিকশা থামিয়ে দোকানের সাইনবোর্ড পড়তাম, অথবা দেয়াল লিখন।
এটা শুধু আমার কথা নয়। আসলে আমাদের সবার ছোটবেলাই প্রায় এরকম। মানে,যারা পড়তে আগ্রহী- তাদের কথা বলছি।
প্রতি বছর একটা করে "আমার বই'- সেই সাথে চলতে থাকতো ঠাকুমার ঝুলি, গোয়েন্দা রাজু, তিন গোয়েন্দা, কুয়াশা, মাসুদ রানা, ফেলুদা, টেনিদা, কাকাবাবু.. সময়ের সাথে সাথে উত্তরন। কোন এক ফঁাকে পড়েছি মণির পাহাড়। রাশিয়া থেকে ছাপা হওয়া বই। অসাধারণ।
তারপর একসময় বুদ্ধদেব সুনীল শীষর্েন্দু সমরেশ দুই হুমায়ুন নির্মলেন্দু সৈয়দ শামসুল আব্দুল মান্নান সৈয়দ, জীবনানন্দ রবীন˜্র মাইকেল, আরো বড় হলে নজরুল।
থামেনি তবু- ও হেনরী, সমারসেট ম্যাক্সিম এরিখ মারিয়া .... হেলাল হাফিজ রু˜্র আহমেদ ছফা ওয়ালীউল¬াহ মানিক ... এ যেন জীবনের সাথে বয়ে চলা এক রেলগাড়ি, থামবার নয়। নতুন নতুন স্টেশন ছঁুয়ে চলতে থাকে, থাকে, থাকেই। জীবন থেমে যাবার আগে থামবে না কখনো।

--------------

থামেনি। কিন্তু একটা বিরতি পড়েছে ঠিক।
দেশ ছাড়ার পর বাংলা বই পড়া হচ্ছেনা একদম। নেট খুঁজে অল্প দুয়েকটা পিডিএফ পাওয়া যায়। হাভাতের মত পড়ি সেগুলো। মেলবোনর্ের বাংগালী দোকানে বই আনে মাঝে মাঝে, বহুল প্রচলিত বই আনে ওরা শুধু, নিজের সাধ মেটানো যায় না সেসবে।
দেশ থেকে বই আনা? বহুৎ খরচান্ত ব্যাপার।

ওয়ার্লড বুক ফেয়ার নামে একটা সাইট বই নামাতে দিয়েছে। ইংরেজী বই। এরকম নানা রকম ওয়েবসাইট আছে, গুটেনবার্গ , রিডপি্রন্ট । মাঝে মাঝে বুভুক্ষের মতন সেখানে উঁকি দেই। বেশ কিছু ভালো বই পড়া হয়েছে ওদের কল্যানে।

কিন্তু,
ওখানে পড়তে পড়তেই মনে হলো। বাংলায় কেন নেই এরকম কিছু?
একটা আর্কাইভের মতন। যেখানে গেলে খুঁজে পাবো মনির পাহাড়, ওঙ্কার, লাল সালু অথবা পদ্মা নদীর মাঝি? আরো সব হাজার বছরের পি্রয় বই গুলো!
চলুন, খানিকটা ভাবনা চিন্তা করি।

---------------------------
একটা সাইট হতে পারে।
যেখানে বাংলা বইগুলো সব আর্কাইভ করা থাকবে। ওখানে গিয়ে বইয়ের নাম বা লেখক ধরে সার্চ করে পড়া যাবে পছন্দের বই।
ব্যাক্তিগত উদে্যাগে হবার দরকার নেই। ম্যানেজ করা ভীষন ঝামেলা। এগিয়ে আসতে হবে কোন প্রতিষ্ঠান কে।
প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে, সেটাকে লাভজনক হতে হবে। সুতরাং, এটা বিনামূলে্যর পে্রাজেক্ট হবে না। তার দরকারও নেই।
কারন,
অনলাইনে বই খুঁজবে তারাই যারা মূলত, দেশের বাইরে থাকে। দেশ থেকে বই কিনে আনানোয় অনেক খরচ। অনেক সাইট আছে, যারা বই বিক্রি করে। অর্ডার নিয়ে ডাকযোগে পাঠিয়ে দেয় সেই বই।
কিন্তু এটাও বিশাল খরচান্ত ব্যাপার। এবং সময়ের।
সিস্টেমটা এমন হতে পারে- মেম্বরশিপ ফি থাকবে একটা। এবং সেই সাথে বই ভেদে পড়বার মূল্যও ধার্য্য করা হতে পারে। তবে সেটা খুব বেশি হবে না। যেন, ছাত্ররাও সেই খরচটা অক্লেশে দিতে পারে এরকম।
পে-পল বা এরকম নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করা যেতে পারে পেমেন্ট সংক্রান্ত কাজের ব্যাপারে।

ঐ বইয়ের লেখক, প্রকাশক বা স্বত¡াধিকারিরা পড়বার ফি-র একটা অংশ পেতে পারেন। সে রকম চুক্তি করলে লেখকেরা বা প্রকাশকেরাও লাভবান হবেন, আপত্তি করবেন বলে মনে হয় না।
অথবা,
সেই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানও নিজেদের সাইটে রাখতে পারেন এরকম কোন ব্যবস্থা।

বইয়ের সফট কপি জোগাড় করা ঝামেলা বলে মনে হচ্ছে না। এখন সবাইই আগে কম্পিউটারে কম্পোজ করে বই ছাপায়। ঐ কম্পোজ কপিটাকে আর্কাইভে দেয়া যায়।
পুরোনো বইগুলোর জনে্য স্ক্যানিং সিস্টেমটাকে কাজে লাগানো যায়।
অনলাইন ব্যবসায়ীদের জনে্য এটা বিশাল লাভজনক একটা পে্রাজেক্ট হতে পারে।
আর বইপে্রমীদের জনে্য হতে পারে ভীষন আনন্দের একটা ব্যাপার।

আর্কাইভিংয়ের একটা চমৎকার উদাহরন হতে পারে বইপাড়া । চমৎকার এবং অনুসরণযোগ্য।
--------------------

আমরা আরো কিছু ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করতে পারি- যেমন,
আগ্রহী কোন উদে্যাক্তাকে খুঁজে বের করা যায় কেমন করে?
আরো কি কি সম্ভাবনা, সমস্যা বা উপায় আমাদের মাথায় আসছে?
সবাই মিলে আমরা এ উদে্যাগটাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারি? কি মনে হয়?

Popular posts from this blog

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান

আরেকটিবার-